কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল আযহা অর্থাৎ কোরবানের ঈদ। পবিত্র কোরবানি কে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন চকরিয়ার কামার পল্লীর শ্রমিকরা। টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে কামার পল্লী গুলো। কোরবানের আর মাত্র ৭ দিন বাকী। এরি মাঝে প্রচন্ড গরমের মাঝেও আগুনের পাশে বসে চুলোয় বাতাস দিয়ে কয়লার আগুনকে আরো বেশি উত্তপ্ত করতে করছে কামার শ্রমিকরা। সেই আগুনের তীব্র তাপে লাল হয়ে যাওয়া লোহাটিকে আর একটি লোহার ওপর রেখে দু-জন লোক পেটাচ্ছেন ভারী হাতুড়ী দিয়ে। আর এতে তৈরি হচ্ছে দাঁ, বটি, ছুরি, চাপাতি, কুড়াল। শান দেয়া হচ্ছে লোহার তৈরী পুরাতন সরঞ্জাম গুলোতে। তৈরিকৃত এসব লোহার পণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। অপরদিকে বাড়ীঘরে পড়ে থাকা দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত (ভোতা) দা, ছুরি, বটি কোরবান উপলক্ষে সানাই দিতে মানুষ নিয়ে আসছে কামারের দোকান গুলোতে।
পবিত্র ঈদ-উল আজহা অর্থাৎ কোরবানিকে সামনে রেখে গতকাল (৪ আগষ্ট) রবিবার বিকালে এমন ব্যস্ততা দেখা গেছে চকরিয়া উপজেলার পৌর শহরের ওয়াপদা সড়ক ও তিন বটতলা এলাকার কামারের দোকান গুলোতে।
কামার শ্রমিক নারায়ন দাশ জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দিন-রাত নতুন ভাবে দাঁ, বটি, ছুরি তৈরি করতে হচ্ছে। আবার মানুষের বাড়ি ঘরে পড়ে থাকা পুরাতন দা, বটি গুলো কোরবানির সময় এসে সান দিতে হয়। কোরবানের এক সাপ্তাহ পূর্বথেকে কামারের দোন গুলোতে প্রচন্ড ভীড় লেগে থাকে। তাই বছরের এই একটি সময়ে কামারেরা ব্যস্ত থাকেন। প্রতি বছরই এ সময়ে কামারদের জমজমাট ব্যবসা হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর একটু ভিন্ন চিত্র দেখা দিয়েছে। লোকজন এবার আগে ভাগেই কেনাকাটা শুরু করায় মালামাল তৈরিতে খুবই চাপ বেড়েছে তাদের।
তিনি আরও জানান, এবার এক কেজি ওজনের চাপাতি বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ থেকে চারশ টাকা পর্যন্ত। বটি বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি চারশ টাকা। সাধারণ বটি আকার অনুযায়ী ১০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। পশু জবাই করার চাকু মাপ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, চামড়া ছোলার চাকু ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা, সাধারণটি ৪০ থেকে ৮০টাকা এবং হাড় ভাঙার জন্য চায়নিজ কুড়াল ৫০০ ও বাংলাদেশী কুড়াল ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
পুরাতন দা, বটি সানাই দিতে নেয়া হচ্ছে প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সানাই দিতে মানুষ দিনরাত ভীড় জমাচ্ছে কামারের দোকান গুলোতে। তাদের দোকানে সানাইয়ের দা, বটি বেশী জমে যাওয়ায় অনেকের মালপত্র ফেরৎ দিতে দেখা যাচ্ছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চকরিয়া পৌরশহরের সবগুলো কামারের দোকানে বিদ্যুৎ চালিত শান মেশিন ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক কাজ করছেন কামাররা। পাশাপাশি আগুনের বাদির মাধ্যমে লোহা পেটাচ্ছেন অন্য কর্মচারীরা। এছাড়া পাড়া-মহল্লায় মৌসুম ভিত্তিক কামাররা রেত (শান দেয়ার যন্ত্র) দিয়ে দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম শান দিচ্ছেন
দাঁ ও বটি কিনতে আসা হালকাকারার গৃহবধু আয়েশা বেগম বলেন, কোরবানির ঈদে পশু জবাই করার জন্য একটু আগে ভাগেই দাঁ ও ছুরি কিনতে এসেছি। ঈদের কাছাকাছি সময়ে আসলে ভালো মানের গুলো পাওয়া যায় না। তবে অন্য বছরের চেয়ে এবার দাঁ-ছুরির দাম স্বাভাবিক রয়েছে।
Copyright @ 2019
Development by: webnewsdesign.com