চকরিয়া উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাত তরুণীর পরিচয় মিলেছে। নিহত তরুণীর নাম চম্পা বেগম (১৯)। তিনি কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার বাসিন্দা রুহুল আমিনের কন্যা। ৫ মাস আগে রামু উপজেলার তেচ্ছিপুল এলাকার ফরিদ আলমের ছেলে শাহ আলমের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর।
এঘটনায় আপন বোনের ছেলের (ভাগ্নে) সঙ্গে বিয়ে না দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তরুণীর বাবা।
বৃহস্পতিবার থানায় লিখিত সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
জানা গেছে, বুধবার রাত পৌনে বারোটার দিকে আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করার সময় ওই তরুণীর মাথা ও গলায় জখমের চিহ্ন পায় পুলিশ। এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনায় ছুটে যান চকরিয়া সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মো. মতিউল ইসলাম, থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একে এম সফিকুল আলম চৌধুরী। এ সময় সেখান থেকে নানা আলামত সংগ্রহ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত এবং থানায় দেওয়া তরুণীর বাবা রুহুল আমিনের লিখিত অভিযোগের উদ্বৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, ওই তরুণীকে রামুর পাত্র শাহ আলমের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয় প্রায় পাঁচ মাস আগে। কিন্তু বিয়ের দুই মাসের মাথায় মেয়েকে ফুসলিয়ে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যায় আপন বোন ছকিনা বেগম ও ভাগ্নে আরিফ। খবর পেয়ে মেয়েকে আনতে গেলে বোন ও ভাগ্নে মারধর করে তাড়িয়ে দিলে তিনি (বাবা) কক্সবাজারে চলে আসেন। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য বোন ছকিনা বেগম, ভগ্নিপতি সালাহউদ্দিন, ভাগ্নে আরিফ ও সিএনজি অটোরিকশার অজ্ঞাতচালককে আসামি করে থানায় লিখিত এজাহার জমা দিয়েছেন মেয়েটির বাবা। নাম উল্লেখিত তিনজনের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
তরুণীর বাবা রুহুল আমিনের দাবি, মেয়ে তার ভুল বুঝতে পেরে বুধবার বিকেলে পিএবিসি সড়ক হয়ে সিএনজিচালিত অটোরিক্শা করে বাড়িতে আসছিল। পেকুয়া চৌমুহনী আসার পর আরেকটি অটোরিকশায় করে এসে পথিমধ্যে বোন, ভগ্নিপতি, ভাগ্নে ও সিএনজিচালক মিলে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে লাশটি সড়কে ফেলে যায়।
বাবার অভিযোগ, তাঁর মেয়ে চম্পাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বোন ছকিনা ও ভাগ্নে চাপ প্রয়োগ করেছিল। কিন্তু ভাগ্নের সাথে মেয়েকে বিয়ে না দিয়ে রামুর তেচ্ছিপুল এলাকার পাত্র শাহ আলমের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হন তারা। এক পর্যায়ে তাবিজ-কবচ করে মেয়েকে শ্বশুর বাড়ি থেকে ফুসলিয়ে চট্টগ্রাম নিয়ে যান।
বাবা রুহুল আমিন বলেন, ‘বুধবার মেয়ে যখন চট্টগ্রাম থেকে অটোরিকশায় উঠে বাড়িতে আসছিল, সেই তথ্য মোবাইল ফোনে জানায়। তখন মেয়েকে আনার জন্য আমি চকরিয়ায় যাই। কিন্তু মেয়েকে মাঝপথে হত্যা করা হয়। পরে রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্নজনের কাছ থেকে জেনে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই।’
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খুন হওয়া তরুণী পিএবিসি সড়ক হয়ে পেকুয়া চৌমুহনী আসার পর সিএনজিচালিত অটোরিকশা বদল করে। সেই অটোরিকশায় উঠার পর সত্যিকার কী ঘটনা ঘটেছে, তার আদ্যোপান্ত বের করা গেলেই এই হত্যারহস্য উম্মোচন হবে। সেদিকেই পুলিশের তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি তরুণীর বাবার দেওয়া এজাহার মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে আজ এবং আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে।’
Copyright @ 2021
Development by: webnewsdesign.com