৩৭ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা হোসেন সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি কেনার নামে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে আসামিদের বিরুদ্ধে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক সাহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। কক্সবাজার সদর মডেল থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খায়েরুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক আবদুর রশীদ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সুবাস চন্দ্র সাহা, সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা আক্তার খুকী, কক্সবাজার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, একই দফতরের সাবেক এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাশ, পংকজ কুমার বৈদ্য ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলম।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন ছাড়াই সাবেক অধ্যক্ষ রেজাউল করিম যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেন। এ জন্য তিনি ক্রয়সংক্রান্ত কাজ করার জন্য কমিটি গঠনের অনুমতি চেয়ে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক আবদুর রশীদ বরাবর চিঠি দেন।
সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগেই অধ্যক্ষ বিভিন্ন কমিটি গঠন করেন। চিঠি দিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র চান। পরে বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র না পেয়েও তিনি পছন্দের ঠিকাদার রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ দেন।
রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম। রুবিনা খানম স্বাস্থ্য অধিদফতরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। আবজালের সঙ্গে বিয়ের পর স্বাস্থ্য অধিদফতরের একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
জানা যায়, রুবিনা খানম কার্যাদেশ অনুসারে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে ভুয়া ও ব্যবহার অনুপযোগী যন্ত্রপাতিতে বিভিন্ন দেশের লেবেল লাগিয়ে কক্সবাজার মেডিকেলে সরবরাহ করেন। পরে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল জমা দিয়ে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা তুলে নেন। ঐসব যন্ত্রপাতি এখনো ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে।
দুদক বলছে, আবদুর রশীদ অবৈধ ঐ কর্মকাণ্ড বন্ধ করেননি। বরং চাহিদাপত্র না পাওয়া সত্ত্বেও আর্থিক ক্ষমতার বাইরে ভেঙে ভেঙে প্রথমে ৩০ কোটি, পরে সাড়ে সাত কোটি টাকা রহমান ট্রেডকে দিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি রুবিনাকে ঐ টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন।
অন্যান্য কর্মকর্তারাও অবৈধ এই কর্মকাণ্ডে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে এজাহারে বলা হয়।
উল্লেখ্য, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আবজাল দম্পতির দুর্নীতির এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছে দুদকের উপ-পরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল। তাদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মামলার অনুমোদন দেয়। পরে মামলা করা হয়।
Copyright @ 2021
Development by: webnewsdesign.com