কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও’র বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো একের পর এক প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অপচিকিৎসা চলছে। অপচিকিৎসা ও অবহেলায় প্রায়শই রোগীর মৃত্যু হয়ে থাকে। এসব ঘটনায় হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটছে। তালা ঝুলিয়েও দেওয়া হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়, ঈদগাঁওতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে মাত্র একটি । আর ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি সেন্টার ও ল্যাবের কোন লাইসেন্স নাই। সরকারি নিয়ম আছে, হাসপাতালে সর্বক্ষণ পালাক্রমে ডিউটি করার জন্য তিনজন ডাক্তার, ছয়জন ডিপ্লোমা নার্স ও ছয়জন প্রশিক্ষিত আয়া থাকতে হবে। হাতে গোনা কয়েকটি ছাড়া কোনো হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স নেই। থাকতে হবে এসিসহ যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত অপারেশন থিয়েটার। অনেক হাসপাতাল ক্লিনিকে তা নেই। নেই ইনকিউবেটর।
রোগী ও বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইন অনুযায়ী হাসপাতাল পরিচালনা করছেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, রোগী ভর্তির পর অপারেশনের প্রয়োজন হলে বাইরে থেকে ডাক্তার এনে অপারেশন করা হয়। অপারেশনের আগে একজন অজ্ঞানকারী ডাক্তার রোগীকে অজ্ঞান করবেন এবং সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অপারেশন করবেন। এ বিষয়ে রোগীদের অভিযোগ, সাধারণ এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার স্পাইনাল কডে ইনজেকশন দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করেন। বিশেষজ্ঞ নন এমন ডাক্তাররা দেদারছে অপারেশন করে যাচ্ছেন। ডাক্তাররা অপারেশন করে চলে যান। তারপর রোগীর চিকিৎসা দেন ভুয়া নার্স বা আয়া। নার্সিংয়ে অনভিজ্ঞ মহিলাদের অ্যাপ্রোন পরিয়ে নার্স সাজিয়ে রাখা হয়। আয়াদেরও কোনো প্রশিক্ষণ নেই।
ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলোতেও নানা অব্যবস্থাপনা আছে। অধিকাংশগুলোতে পাস করা ফার্মাসিস্ট নেই। অনভিজ্ঞ লোক দিয়ে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
গত ২৩ জুন ঈদগাঁও বাসস্ট্যান্ডস্থ “ট্রমা সেন্টার ও ল্যাব হাসপাতালে” সদরের ভারুয়া খালী এলাকার এক প্রসূতি অপচিকিৎসায় শিকার হয়ে মারা যায়। তাছাড়া ডাইবেটিস কেয়ার এন্ড হাসপাতালেও অহরহ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ফার্মেসীর আড়ালে গড়ে তোলা আলম মেডিকোর পিছনে কথিত হাসপাতালে নারী চিকিৎসক খালেছা বেগম, হাসপাতাল সড়কে ডাঃ মুরশিদা খানম, আলমাছিয়া মাদ্রাসা সড়কে ডাঃ রেহেনা নোমান কাজল, বাজারের দক্ষিণ পাশে ডাঃ রিখা শর্মা, ডি সি রোডে ডাঃ তৃণা শাহা, ষ্টেশনস্থ পপুলার ফার্মেসীর পিছনে ডাঃ শামিম রাশেলের চেম্বার সহ একাধিক হাসপাতাল- ক্লিনিকে অপচিকিৎসায় অহরহ প্রসূতি ও এক নবজাতকের মুত্যু হয়।
একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও হাসপাতাল এবং ডাক্তারের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। আলম মেডিকোর পিছনে গড়ে উঠা কথিত ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল উপজেলা প্রশাসন। এর পর কোন অভিযান চালানো হয়নি এসব হাসপাতাল ক্লিনিক নামের কসাইখানার বিরুদ্ধে। এমনটাই জানালেন রমজান আলী সিকদার নামের এক ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সিভিল সার্জন আবদুল মতিন বলেন, অবহেলা বা অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে তদন্ত করে হাসপাতাল বা ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হবে। অব্যবস্থাপনায় প্রতিটি মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ পেলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি ।
Copyright @ 2021
Development by: webnewsdesign.com